জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কপ২৯ এ সংবাদ সম্মেলনে দাবি গত ১০ বছরে বাস্তুচ্যূত হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলের ১৪.৭ মিলিয়ন মানুষ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদশের উপকূলের অন্তত ১৪.৭ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছেন। এছাড়া বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহসহ নানান দুর্যোগে প্রতি বছর মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় ১১ জেলার ৮ মিলিয়ন মানুষের অন্তত ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিন আজারবাইজানের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় কপ২৯ এর নাতাভান প্রেস কনফারেন্স রুমে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নেচার কনজারভেশন মেনেজমেন্ট (ন্যাকম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মঞ্জুরুল হান্নান খান।
লিখিত বক্তব্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাংলাদেশের ৩ হাজার ৪৪৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ৮.৯ মিলিয়ন মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে ১২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ১০০.৬ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড় মখায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৬৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যার ক্ষতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৪ সালের বন্যায় দেশের ৩৯ জেলার ৩৬ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। সেই বন্যায় ৭০০ মানুষের মৃ্ত্যুসহ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ এর বন্যায় ৭.২ মিলিয়ন মানুষ আক্রন্ত হয়, এতে ৮০ জন মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সবশেষ ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলসহ ১১ জেলায় অন্তত ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৯ শিশু ও ৭ নারীসহ ৭১ জন মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি অন্তত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়। যদিও এই বন্যার জন্য জলবায়ুর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, বাংলাদেশ শুধু ঝড়-বন্যা নয় আরও বহু দুর্যোগ মোকাবিলা করছে। যার মধ্যে রয়েছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিট ওয়েভ, জলাবদ্ধতা, লবনাক্ততা, নদী ভাঙন ও পানি সংকটসহ নানান দুর্যোগ।
এসব দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি, যৌন রোগ, মানসিক সমস্যা, শিক্ষা সংকট, সামজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়াসহ নানান সমস্যায় ভুগে শেষ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুতও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও এখন এসব সমস্যা বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে তবে বিশ্ব নির্লিপ্ত থাকলে খুব শিগগিরই এমন সমস্যার মুখে পড়তে হবে তাদেরও। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবাইকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, জলবায়ু গবেষক রউফা খানম এবং তরুণ জলবায়ুকর্মী এস এম শাহিন আলম।