নিজস্ব সংবাদ দাতা :
ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে বিভিন্ন মানুষের দেওয়া মামলার কারণে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদ মাহমুদ আলী বসতে পারছেন না পরিষদে। সেই সাথে পরিষদের অপরাপর অধিকাংশ সদস্যরাও একই কারণে পরিষদে আসেন না। যার কারণে পরিষদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মানুষ। দিনের পর দিন সেবা না পেয়ে পরিষদ থেকে ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা। তাই জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ভোগান্তির শেষ যেন হচ্ছে না। যার কারনে স্থানীয় নাগরিকগণ চেয়ারম্যান সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ, গ্রাম আদালত, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ-সহ সব সেবা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত। তাই জনগণের দুর্ভোগ কামাতে পরিষদের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারকে বিহিত ব্যাবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। দ্রুত এর সামাধান না হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা মনে করবে অনেকেই। পাশাপাশি সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বৈরাচারের দোসরেরা ইউনুস সরকারকে ব্যর্থ করতে বিভিন্ন বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়িয়ে উশৃংখল পরিবেশ তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করেছেন স্থানীয়রা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার নৌকার প্রতীক নিয়ে টেকনাফের ৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে যে কয়জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ অন্যতম। যেটি টেকনাফ উপজেলার জন্য ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন জানান, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের মানুষ বর্তমানে সেবা বঞ্চিত। সেখানে চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান ১ ও ২ সহ অনেকেই অনুপস্থিত থাকেন। আর ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান তো আগে থেকে পদত্যাগ করেছেন। যার কারণে এখন জনগণ ভোগান্তিতে রয়েছে। আমি সরকারের কাছে বলবো, আপনেরা সেখানে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
পরিষদের সেবা নিতে আসা লেদা এলাকার আব্দু শুক্কুর বলেন, আমি বার বার এসে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের না পেয়ে ফিরে যায়। চেয়ারম্যান থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান পর্যন্ত কেউ নেই। আমি গরিব মানুষ একটা জাতীয় সদন নিতে যদি বার বার এসে আজ না কাল, কাল না পরশু এরকম করে ফিরে যেতে হয় তাহলে আর জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজন কি? শুধু তা নয় পরিষদ কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একটি সাক্ষরের জন্য সকাল সন্ধ্যা অপেক্ষা করেও মিলেনা। তাই আমরা সাধারণ জনগণ যেন পরিষদের সেবা পাই সে ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আলী আহাম্মদ জানান, বর্তমানে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদে বসবাসরত প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ ও ৩৫ হাজার ভোটার সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য যে জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রবাসে যেতে স্থানীয় ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের যে কাগজ পত্র প্রয়োজন তার কোনটি মিলছেনা। কারণ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্যানেল চেয়ারম্যান পর্যন্ত পলাতক বা তেমন আসেন না। আমি জেলা প্রশাসক-সহ সকলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা পরিষদের সেবা পাওয়ার জন্য আপনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
টেকনাফ উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উল্লাহ নিজামি কে ওই বিষয়ে আমরা অবগত করেছি এবং কাজ করতেছি, আমরা ইতিমধ্যে সচিবকে বলেছি। তারা যদি একটি রেজুলেশন করে আমাদের বরাবরে পাঠালে আমরা জেলা প্রশাসক কক্সবাজার অফিসে পাঠাব। সেখান থেকে তিনি যে ভাবে প্রদক্ষেপ নিতে হয় তা নিবেন।
এ বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীর কাছে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাহার নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবা প্রার্থী বলেন, সকালে পরিষদ ভবনে ‘ভিডব্লিউবি’ চাল বিতরণ জনসাধারণের মাঝে হট্টগোল দেখা গেছে। শৃংখলা বলতে কিছুই দেখিনি। পরিষদে কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে এ অবস্থা। এ বিষয়ে জানতে পরিষদের সচিব, রফিক মেম্বার সহ অনেককে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ১, ২ ও ৪নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার জানান আমি সকাল থেকে পরিষদে যায়নি। আমি একটা মিটিং এ আছি বলে জবাব দেন।