নিজস্ব প্রতিবেদক:
লবণের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে কক্সবাজারের মহেশখালীতে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মহেশখালী লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে মহেশখালী ইউএনও অফিসের সামনে লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি মহেশখালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ।
মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি ছিলেন–আবদু শুক্কুর সি.আই.পি, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন, মহেশখালী (দক্ষিণ) জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মাস্টার শামীম ইকবাল, নেজামে ইসলামী পার্টির উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, এবি পার্টির আহ্বায়ক আবদুল হান্নান, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি জেলার সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন, কুতুবজোম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম, ছোট মহেশখালীর সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মহেশখালী লবন চাষী কল্যাণ সমিতির ৮ দফা দাবিসমূহ :
১. ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ: বর্তমানে প্রতি মণ লবণের উৎপাদন খরচ ৩৫০ টাকা কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৫০ টাকায়। এতো লোকসান চাষীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, তাই জাতীয় লবণ নীতির আলোকে ০২ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ সরকারিভাবে ক্রয় করে মিল মালিকদের কারসাজি হতে লবণ চাষীরা মুক্ত হয়ে ন্যায্য মূল্য পাবে। অন্যথায় আগামী বছর চাষীরা লবণ উৎপাদনে নিরোৎসাহিত হবে ফলে এশিল্প পুনরায় আমদানী নির্ভর হয়ে উঠবে।
২. উৎপাদন খরচ হ্রাস: সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে, বিসিকের মাধ্যমে প্রান্তিক লবণ চাষীদের মাঝে বরাদ্দ প্রদান করা হলে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হবে।
৩. দারিদ্র্য নিরসন: বর্ষা মৌসুমে লবণ চাষীদের হাতে কোন কাজ থাকে না। এই অবসরকালীন সময়ে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সহায়তা প্রদান করা হলে দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
৪. গুণগত মান উন্নয়ন: বিশ্বমানের লবণ উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারে একটি লবণ গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং প্রতিটি উপজেলায় লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে লবণ চাষীদের আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে দেশে মানসম্মত লবণ উৎপাদন সম্ভব হবে।
৫. শিল্পের বিকাশ: সম্ভাবনাময় লবণ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি বাস্তবিক ও “পূর্ণাঙ্গ লবণ বোর্ড” গঠন করা সম্ভব হলে এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব হবে।
৬. স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও রপ্তানি: বাংলাদেশে লবণ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প। লবণ আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে, উৎপাদিত উদ্বত্ত লবণ রপ্তানির ব্যবস্থা করলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদান আরও বৃদ্ধি পাবে।
৭. সিন্ডিকেট বন্ধকরণ: লবণ শিল্পকে বাচাঁতে হলে পরিকল্পিত সিন্ডিকেট করে লবণ আমদানী বন্ধ করতে হবে।
৮. ক্যামিকেলযুক্ত লবণ বন্ধ করতে হবে: প্যাকেট জাত ভোগ্য লবণে পরিকল্পিতভাবে ক্যামিকেল মিশ্রিত করে সাধারণ জনগণের মাঝে যে লবণ সরবরাহ করা হচ্ছে তা গ্রহণ করে হাজার হাজার মানুষ ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই প্যাকেট জাত ভোগ্যপণ্য লবণে ক্যামিকেল যাতে মিশ্রিত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, চাষীদের এই দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব হলে, লবণ চাষীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন।
বক্তারা আরও বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে লবণ চাষীদের আকুল আবেদন প্রান্তিক চাষীদেরকে বাঁচান, এই শিল্পকে বাঁচান। অন্যথায় চাষীদের লোকসানের ফলে লবণ উৎপাদন হতে মুখ ফিরিয়ে নিলে এই শিল্প ধ্বংসের পথে যাবে এবং পুনরায় আমদানি নির্ভর হবে। তাই জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানান।