উখিয়া প্রতিনিধি:
গত বছর ভয়াবহ পাহাড় ধসের স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্লক থেকে ১৫০টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বর্ষায় পাহাড় ধসে এই এলাকায় প্রাণ হারিয়েছিলেন সাতজন রোহিঙ্গা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও একই ধরনের বিপদের আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যাম্প ১৪-এর ইনচার্জ ফারুক আল মাসুম এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরানো অত্যন্ত জরুরি। গত বছর বর্ষায় পাহাড় ধসে আমরা সাতটি মূল্যবান জীবন হারিয়েছি।” এনজিও সংস্থা সওয়াব ৩২২টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে।
তবে, এই মানবিক উদ্যোগের মধ্যেই একটি মহল ক্যাম্পে পাহাড় কাটা ও গাছ কেটে নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য শেড নির্মাণের অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, এর ফলে মিয়ানমার থেকে আরও রোহিঙ্গা আসতে উৎসাহিত হবে। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে একদল সংবাদকর্মী আজ সরেজমিনে ১৪ নম্বর ক্যাম্পে নবনির্মিতব্য শেড এলাকা পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন শেড নির্মাণাধীন ই-৩ ব্লকে কোনো পাহাড় বা গাছপালা নেই। এটি একটি বিশাল উন্মুক্ত মাঠ, যেখানে আগে কোনো বসতি ছিল না। ফলে গাছ কাটা বা পাহাড় কাটার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান হয়। স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানান, এই জায়গাটি পূর্বে হাতির বিচরণক্ষেত্র ছিল। গত বর্ষায় পাহাড় ধসে বিভিন্ন ব্লকে সাতজনের মৃত্যুর পর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষকে সরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন।
সওয়াবের জেলা কোঅর্ডিনেটর আবু সাদাত আহমেদ এই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে সওয়াব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে। পাঁচটি ব্লকের অতি ঝুঁকিপূর্ণ শেড থেকে ৩২২টি পরিবারের মধ্যে ১৫০টি পরিবারকে বর্ষার আগেই সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্লক ই-৩-তে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সহকারে শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এই শেড নির্মাণের কাজ চার মাস আগে শুরু হয়েছে এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার আশা দেখাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ক্যাম্পে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভিত্তিহীন অভিযোগের বিপরীতে সরেজমিন অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উঠে আসায় ক্যাম্পে কর্মরত অন্যান্য সংস্থা এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।