কুতুবদিয়ায় ফেরি চালুর দাবিতে দ্বীপবাসীর জোরালো আহ্বান

উপজেলা কক্সবাজার পর্যটন বিশেষ প্রতিবেদন ব্যবসা ও বাণিজ্য ভ্রমণ
প্রতীকী ছবি

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত কুতুবদিয়া দ্বীপের পৌনে দুই লক্ষ মানুষ যুগের পর যুগ ধরে অবহেলিত। বর্ষা মৌসুমের আগে ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ মেরামত, নিরাপদ পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু এবং একটি উন্নত মানের হাসপাতালের দাবিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আকুল আবেদন দ্বীপবাসীর। দুর্বল নেতৃত্ব আর উদাসীনতার কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত এই দ্বীপের মানুষ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কুতুবদিয়া-মগনামা নৌপথে ফেরি চালু না হওয়ায় দ্বীপবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লক্কর-ঝক্কর নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে ৩.৯ কিলোমিটারের বিপজ্জনক নৌপথ পাড়ি দেন। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি বাড়ছে খরচ। মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার অথবা ৮০ কিলোমিটার দূরের চকরিয়া যেতে হয়, পথে অনেকেরই জীবনাবসান ঘটে। তাই এই রুটে জরুরি ভিত্তিতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি দীর্ঘদিনের।

অন্যদিকে, ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। নিয়ম অনুযায়ী ২০ টাকা বোট ভাড়া হলেও তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। স্পিডবোটের ভাড়া ৭০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে সম্প্রতি ভাড়া কিছুটা কমলেও ভোগান্তি কমেনি। তাছাড়া পারাপারে জেটিতে উভয় পাশে অতিরিক্ত ৫ টাকা করে টোল আদায় যেন বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পরিবহনের অভাবে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজারের সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য বড়ঘোপ-মগনামা নৌ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা এখন সময়ের দাবি।

দ্বীপের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় কুতুবদিয়ার চারপাশে ৪০.১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি বৃহৎ প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে ৮.৫ মিটার উচ্চতার বাঁধ নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর খনন ও বনায়ন এবং বাঁধের উপর আধুনিক সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল। স্থানীয়রা মনে করেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দ্বীপটি একদিকে যেমন সুরক্ষিত হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধি লাভ করবে।

কুতুবদিয়া সমিতি ও কুতুবদিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদার বলেন, দ্বীপের দেড় লক্ষ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সুপার ডাইক নির্মাণ ও ফেরি চালুর দাবিতে দ্বীপবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়িতে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সুপার ডাইক নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৭০ নং পোল্ডার বান্দরবান জেলায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও কাজের সুবিধার্থে এটি এখন কক্সবাজার জেলার অধীনে আনা হয়েছে।

দ্বীপবাসীর প্রশ্ন, সন্দ্বীপের মানুষ ফেরি আর মহেশখালী সী-ট্রাক সুবিধা পেলে কুতুবদিয়া কেন বঞ্চিত থাকবে? পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ওই রুটের ২৯টি ফেরিকে কুতুবদিয়া-মগনামা রুটে চালুর দাবি এখন আরও জোরালো হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপারের এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ফেরি সার্ভিস চালু এবং সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন কুতুবদিয়াবাসী।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার আ.ম.ম নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টায় কুতুবদিয়ায় সী ট্রাক চালু হলেও রহস্যজনক কারণে তা অল্প কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়দের ধারণা, এর পেছনে কিছু অসাধু চক্র ও ঘাট ইজারাদারদের হাত রয়েছে। কুতুবদিয়ার মানুষ এখন আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত ফেরি সার্ভিস চালুর জোর দাবি জানাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *