একটা বেড়িবাঁধের অভাবে প্রতিবছর সামান্য জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে

কক্সবাজার

 

২১ মে ২০১৬, শনিবার। আমি দশম শ্রেণীতে তখন। প্রতিদিনের মতো করেই আমাদের দিন শুরু হয়েছিল। কে জানতো, কয়েক ঘন্টা পরে সব বিলীন হয়ে যাবে।

ওইদিন সকাল ১০ টার দিক থেকে সমুদ্রের পানি বেড়িবাঁধ (পড়ুন বালির বাঁধ) অতিক্রম করা শুরু করছিলো। উঠানে হাঁটু সমান পানি জমা হওয়ার পর বুঝতে পারছিলাম গরু বাড়িতে রাখা যাবে না। সুতরাং, এক আত্মীয়ের বাড়িতে গরু রাখতে গেছিলাম। যাওয়া আসায় সব মিলিয়ে ৩০-৪০ মিনিট মতো হবে৷ আসার সময় পানির স্রোতের কারণে রাস্তা দিয়ে আসা যাচ্ছিলো না। এলাকায় পৌঁছার পর দেখি গলা পরিমাণ পানি। এর একটু পরেই এলাকায় কোনো বাড়িঘর আর অবশিষ্ট ছিল না। সমুদ্রের ঢেউ সব ছিল বাড়ির চালের উপর। চোখের সামনে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে গেছিলো। ঘন্টা দু’য়েকের তান্ডবের পর পানি নেমে যায়। আমার সিঙ্গেল একটা বই খাতা অবশিষ্ট ছিল না। সব পানিতে ভেসে গেছিলো। শুধু আমার না, এলাকায় কারও বই খাতা অবশিষ্ট ছিল না।

সেদিন ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর তান্ডবে আমাদের পুরো এলাকা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। অনেকে হয়তো ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর নাম শুনেন নাই। না শোনারই কথা। বড়সড় কোন ঘূর্ণিঝড় ছিল না। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফিট বেশি ছিল আর বাতাস ছিল। তাতেই আমাদের ওরকম অবস্থা হয়েছিল। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এমন কোনো বছর নেই, যেই বছর আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়নি৷ ভারত বলি বা মায়ানমার বলি, কোথাও ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে মানে বোনাস হিসাবে আমাদের এলাকা প্লাবিত হবে৷ প্রতি বছর বর্ষা আসে, সমুদ্রের ঢেউয়ে আমাদের বাড়িঘর ভাঙ্গে।

একটা বেড়িবাঁধের অভাবে প্রতিবছর সামান্য জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মানুষজন ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের বাইরে জায়গা কেনার সামর্থ্য নেই তারা কোথায় যাবে? কেন যাবে?

সরকার আসে, সরকার যায়। এক নেতা বসে আরেক নেতা আসে৷ বেড়িবাঁধের আশ্বাস দেয়, টেন্ডারের কথা শুনি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমাদের উঠোন থেকে মাটি টেনে বাঁধের উপর দেওয়া হয়৷ আর বৃষ্টির পানিতে তা আবার আগের জায়গায় চলে আসে, জোয়ারের পানি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। ছোটকাল থেকেই এসব সার্কাস দেখে আসতেছি। টেন্ডার হওয়ার খবর শুনি। কিন্তু কাজের বেলায় দেখি সেই আমাদের উঠোনের বালি, যেটা জোয়ারের পানির অপেক্ষা করে না।

এইটা শুধু আমার এলাকার চিত্র না, পুরো কুতুবদিয়ার চিত্র।

এভাবে আর কতদিন চলবে? আমাদের প্রতি এত অবহেলা কেন? কুতুবদিয়ার মানুষের কি বাঁচার অধিকার নেই? কুতুবদিয়ার মানুষের দুর্দশা নিয়ে কথা বলার মতো কি কেউ নেই? কুতুবদিয়ার সিনিয়র মানুষজন অনেক ভালো ভালো জায়গায় আছেন৷ আপনারা থাকার পরও আমাদের এত দুর্দশা হয় কি করে?

আমরা বেশি কিছু চাচ্ছি না। আমরা আমাদের বাঁচার অধিকার চাচ্ছি। আমাদের একটা বেড়িবাঁধ দরকার, টেকসই বেড়িবাঁধ। কোনো বালির বাঁধের দরকার নেই আমাদের।

 

মিজানুর রহমান

শিক্ষার্থী (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও

সভাপতি, দ্বীপ শিখা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *