টেকনাফের গভীর পাহাড় থেকে উদ্ধার সিলেট থেকে অপহৃত ৬ রাজমিস্ত্রি

অপরাধ আইন ও আদালত উপজেলা কক্সবাজার প্রধান খবর বাংলাদেশ
ছবি : ডিএনএন

টেকনাফ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের টেকনাফের রাজারছড়া যেন এক গভীর ত্রাসের আঁধার হয়ে উঠেছিল। গত ১৫ই এপ্রিল রাজমিস্ত্রির কাজের আশায় সুদূর সিলেট থেকে আগত ছয়জন নিরীহ শ্রমিক অপহরণের শিকার হন। দীর্ঘ সাত দিন পর, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে গতকাল সন্ধ্যায় তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।

অপহৃত শ্রমিকরা হলেন—আব্দুল জলিল (৫৬), খালেদ হাসান (১৮), মারুফ আহমদ (১৯), রশিদ আহমদ (২৪), এমাদ উদ্দিন (২৫) এবং শাহীন আহমদ (২২)। তারা সবাই সিলেটের জকিগঞ্জ থানার পশ্চিম লোহার মোহর গ্রামের বাসিন্দা। কাজের প্রলোভনে ফেলে স্থানীয় শফিউল্লাহ নামক এক ব্যক্তি তাদের কক্সবাজারে ডেকে আনে এবং পরবর্তীতে একটি অপহরণচক্রের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ঘটনাটি দ্রুত গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আমলে নেয় এবং অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় টেকনাফ মডেল থানার একটি চৌকস দল অপহৃতদের সম্ভাব্য অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গতকাল ২২শে এপ্রিল গভীর সন্ধ্যায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দুর্গম রাজাছড়া পাহাড়ি এলাকায় এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলের গভীরে অপহরণকারীদের আস্তানায় অতর্কিত হানা দেয় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, ভাগ্যক্রমে অপহৃত ছয়জন শ্রমিক অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হন।

এই সাহসী উদ্ধার অভিযান নিয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, “আমরা তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভিকটিমদের অবস্থান নির্ণয় করতে পেরেছিলাম। আমাদের পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে। পলাতক অপহরণকারীদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

এই ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ এখন মূলহোতা শফিউল্লাহসহ অন্যান্য পলাতক অপহরণকারীদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

সিলেটের এই ছয়জন শ্রমিকের অপ্রত্যাশিত মুক্তি তাদের পরিবারে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পুলিশের এই সফল অভিযান আবারও প্রমাণ করলো, অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক, আইনের হাত তাদের ছাড়বে না। এই ঘটনা কক্সবাজারের শ্রমজীবী মানুষের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *