হাতের কাজে স্বাবলম্বী শামসুন নাহারসহ কক্সবাজারের হতদরিদ্র নারীরা নেপত্যে -উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস।

কক্সবাজার

হাতের কাজে স্বাবলম্বী শামসুন নাহারসহ কক্সবাজারের হতদরিদ্র নারীরা নেপত্যে -উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস।

প্রাঙ্গণ পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে উঠোনজুড়ে ছড়ানো অসংখ্য বাঁশের চাঁই। সদ্য কেটে রাখা এই চাঁইগুলো দিয়ে তৈরি হবে নানা হস্তশিল্প সামগ্রী। গৃহকর্ত্রী শামসুন নাহার জানালেন, ৩৮ বছর বয়সি এই নারী কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের রুহুল্লারডেবার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন ডালা, কুলা, চালনি, পানডালা, মাছ ধরার ঝুড়ি, চাটাইসহ গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী।

শামসুন নাহারসহ এই এলাকার বহু নারী ইউনাইটেড পারপাস নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে হস্তশিল্পের দক্ষতা অর্জন করেছেন। ইউনাইটেড পারপাস ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সহযোগিতায় কক্সবাজারের সদর, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, ঈদগাহ ও চকরিয়া উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হতদরিদ্র উপকারভোগীকে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

শামসুন নাহার বলেন, “বাঁশ দিয়ে তৈরি সামগ্রী এখন আমার জীবিকার প্রধান উৎস। প্রশিক্ষণের পর আমার কাজের চাহিদা বেড়েছে, ফলে সংসারের আর্থিক অবস্থাও অনেকটা বদলেছে।”

একই এলাকার ফরিদা বেগমও বাঁশ-বেতের কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এভাবে অসংখ্য নারী তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলছেন। মহেশখালীর রাশেদা আক্তার ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে ৩টি ছাগলের মালিক হয়েছেন, যা তার পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।

রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা বলেন, “ইউনাইটেড পারপাস ও আইওএমের সহযোগিতায় হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমার এলাকায় আরও অনেক দরিদ্র পরিবার আছে, তাদের জন্যও এ ধরনের সহায়তা প্রয়োজন।”

ইউনাইটেড পারপাসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, উখিয়ার রত্নাপালং, জালিয়াপালং এবং টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে ৯০০ উপকারভোগীকে আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে সহায়তা করা হয়েছে। তারা এখন নিজেদের মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ইউনাইটেড পারপাসের প্রজেক্ট ম্যানেজার হাসানুজ্জামান বলেন, “গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও আইওএমের সহযোগিতায় কক্সবাজারের ৩ হাজার ৫০০ উপকারভোগীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। তাদের স্কিল ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আর্থিক ও উপকরণ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৬টি আউটলেট স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এসব উপকারভোগীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা হবে।”

উখিয়ার ইউএনও তানভীর হোসেন বলেন, “কক্সবাজারে অনেক এনজিও স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের মধ্যে ইউনাইটেড পারপাস অন্যতম। তারা যেভাবে দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে, তা দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনছে। তবে আরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন আছে।”

এই উদ্যোগগুলো ধরে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদে আরও সহায়তা ও কার্যক্রম প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *