মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে

সম্পাদকীয়

আলী ওসমান শেফায়েত

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। প্রতি বাংলা বছরের প্রথম তারিখে বর্ষবরণ উৎসবে বেশ ঘটা করে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, যেখানে থাকে বিশালাকৃতির দানব, সরীসৃপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুক, লক্ষ্মীপ্যাঁচা ও হুতুমপ্যাঁচার মুখোশ, মানুষের মুখোশসহ নারীর অঙ্গপ্রতিকৃতির নানা অশ্লীল ও নগ্নতাপূর্ণ প্রদর্শনী। আয়োজক ও উদ্‌যাপনকারীদের বিশ্বাস, দেশের কলাবিজ্ঞানীদের হাতে বানানো এসব বাঘ, ভালুক, দানব, হাতি ও ঘোড়া অমঙ্গলকে তাড়িয়ে মঙ্গল বয়ে আনবে (নাউজুবিল্লাহ)। পৌত্তলিকতার ছাঁচে ঢালা এ ধরনের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের কারণে ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে পূজামণ্ডপের সঙ্গে তুলনা করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

পত্রিকাটির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দেবদূত ঘোষ ঠাকুর বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলেছেন, ‘ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া। কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে! কখনো মনে হচ্ছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার বা একডালিয়ার পূজমণ্ডপ। কখনোবা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের চেহারা। তা সে রমনার বটমূলের বৃন্দগানই হোক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা।’ (দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা : ১৫ এপ্রিল ২০১৮)। আসলে বর্ষবরণের হাল-সুরত কি আদৌ এমন হওয়ার কথা? এগুলোই কি হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি?

বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি কী?

ইতিহাস বলে, বাংলার সংস্কৃতি হলো আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। লোকগীতি, পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, নদীর গান, গাঁয়ের মানুষের গান, রাখালের সুরেলা বাঁশি, জারিসারি, নবান্নের হরেক রকমের পিঠা, কৃষকের লাঙল টানা, কুটিরশিল্পের সৃষ্টিশীলতা, শীতের সকালে কুয়াশাজড়ানো পরিবেশে খেজুরের রসে ভাপা পিঠা, পল্লিবধূর নকশিকাঁথা, পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের কাব্যে রচিত পল্লিজীবনের অপরূপ সৌন্দর্য-সুষমা, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা, নজরুলের কাব্যে দ্রোহের বহ্নিশিখা, মধুসূদনের দেশটান প্রভৃতি হচ্ছে আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি।

যুগ যুগ ধরে এই বাংলার নববর্ষ কীভাবে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে, সেদিকে তাকালেও দেখতে পাই, গ্রামীণ গম্ভীরা, জারি, লোকগীত ছাড়াও রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানই ছিল বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের মূল উপাদান। বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের ব্যাপ্তি বিশাল। গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, ঢাকার রমনা বটমূল, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পুরান ঢাকাসহ সারাদেশের গ্রাম-শহরে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা এদিন সকাল থেকে মেতে ওঠে নাচ-গান, কবিতা, নাটক, হাডুডু খেলা, গ্রাম্য মেলা, নাগরদোলা, ঘুড়ি ওড়ানো ও হালখাতা উৎসবে। নতুন সাজে রঙবেরঙের পোশাকে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রা হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি হলো কবে থেকে? ইতিহাস কী বলে?

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস

১৯৮৫ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক এই কিম্ভূতকিমাকার বিদঘুটে আয়োজনের আবিষ্কার করা হয় যশোরে। এর আগে ১৯৮০ সালে ঢাবির কলা বিভাগের প্রবর্তিত নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। আর ঢাকায় আমদানি হয় ১৯৮৯ সালে। (বিবিসি বাংলা : ১৩ এপ্রিল ২০১৭)। আরেকটু ভেঙে বললে, আশির দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একই সঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের কিছু ছাত্রের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে প্রথম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র প্রবর্তন হয়, যার অন্যতম সংগঠক ছিলেন শিল্পী তরুণ ঘোষ। তিনি পশ্চিম বাংলার বরোদায় আর্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। বরোদায় যেভাবে নতুন বছরকে বরণ করার জন্য নানা ফোক, মোটিফ, মুখোশ ও খেলনার আয়োজন করা হয়, সেই কনসেপ্ট আমদানি করে তরুণ ঘোষ সেবার কিছু মুখোশ আর জীবজন্তুর প্রতীক ব্যবহার করেন। পরে এটাকে আরো হিন্দুয়ানি করে নাম বদলে দেওয়া হলো ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এখন সেখানে হিন্দুদের প্রায় সব দেবদেবী, গণেশের বিভিন্ন প্রতিমা, রাক্ষস-খোক্কস, অসুর, আবার মানুষের মুখোশসহ নারীর অঙ্গপ্রতিকৃতির নানা অশ্লীল ও নগ্নতাপূর্ণ প্রদর্শনীও বহন করা হয়। অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে যশোরে শুরু হওয়া সংস্কৃতিকে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি বলে এখন জাতিকে গেলানো হচ্ছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা কী করে আবহমানকালের ঐতিহ্য হয়? আসলে শেয়াল-কুকুর আর ভূত-পেত্নীর মুখোশকে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি নাম দেওয়াটা অকাট মূর্খতা ও ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর।

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সূচনা

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সূচনা হয় মূলত মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকেই। আকবর তার সভাজ্যোতিষী আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজির পরামর্শে হিজরি ৯৬৩ সনকে বাংলা ৯৬৩ সন ধরে বাংলা সন গণনার নির্দেশ দেন। পারস্যের (ইরানের) নববর্ষ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠান ‘নওরোজ’-এর আদলে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সূচনাও করেন তিনি। তার আনুকূল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হতো। ‘নওরোজ’ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ‘মিনা বাজার’। আর এ মিনা বাজারের আদলে বাংলা নববর্ষ উৎসবে যোগ হয়েছে ‘বৈশাখী মেলা’।

প্রকৃতপক্ষে বাংলা ‘নববর্ষ’ উৎসবের মূলে আছে মুসলিম ঐতিহ্য। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে বাংলা সনের সঙ্গে যেমন মুসলিম ঐতিহ্য জড়িত, তেমনি নববর্ষ উৎসবের সঙ্গেও জড়িত পারসিয়ান মুসলিম সংস্কৃতি। মুসলিম ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বাংলা নববর্ষ চালু হলেও মুসলমানদের উদারতার কারণে তা সর্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হলেও আধুনিক নববর্ষ উদ্‌যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি।

১৯৬১ সালে ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৬৭ সাল থেকে এই সংস্থা রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন শুরু করে। বাংলাদেশে সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, ওঁরাও, গারো, মো, মোরাং, হাজং প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অনুসারে নববর্ষ পালন করে থাকে। এখন বাঙালি সংস্কৃতির নামে চর্চিত হচ্ছে যতসব উলঙ্গ পাশবিকতার। আর সেই পশুসুলভ আয়োজনকেই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংস্কৃতি বলে।

সর্বজনীন নয়, হিন্দুজনীন উৎসব

হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিকে তারা বলছে, ‘পহেলা বৈশাখ একটি সর্বজনীন বাঙালি উৎসব।’ ওই দিনের সর্বজনীন উৎসবের মধ্যে রয়েছে হিন্দুদের ঘটপূজা, গণেশ পূজা, সিদ্ধেশ্বরী পূজা, হিন্দুদের ঘোড়ামেলা, হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, হিন্দুদের চড়ক বা নীল পূজা বা শিবের উপাসনা ও সংশ্লিষ্ট মেলা, গম্ভীরা পূজা, কুমিরের পূজা, অগ্নিনৃত্য, ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, মজুসি তথা অগ্নিপূজকদের নওরোজ, হিন্দুদের বউমেলা, মঙ্গলযাত্রা ও সূর্যপূজা। একটু ভাবুন, সূর্যপূজারিদের সঙ্গে সময়ের সামঞ্জস্য হয়ে যাবে বলে তিন সময় নামাজ পড়া ইসলামে হারাম। আর কাফেরদের পূজাকে এখন বানানো হচ্ছে সর্বজনীন!

বাঙালি বনাম মুসলমান

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা ১৯৬৭ সাল থেকে এবং শোভাযাত্রার সূচনা ১৯৮৯ সাল থেকে। তা হলে এ আয়োজনকে কীভাবে বাঙালির সংস্কৃতি দাবি করা হয়? আজ থেকে ১০০ বছর আগের বাঙালি কোনো মা, বধূ বা কন্যা কি স্বপ্ন দেখতেন যে, কোনো পরপুরুষ তার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে আলপনা এঁকে দেবে, আর সে পরপুরুষকে মুখে তুলে ইলিশ-পান্তা খাওয়াবে? বিগত হাজার বছরের বাঙালি নারীসমাজ পরপুরুষের সান্নিধ্যকে ঘৃণা করে এসেছে।

বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য হচ্ছে পর্দা ও শালীনতাবোধের গর্বিত ইতিহাস। ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে বটতলায় বসা বাঙালির সংস্কৃতি নয়। হ্যাঁ, শরৎচন্দ্রের ভাষায় ভাষা মিলিয়ে কেউ যদি বলেন, ‘আজ বিকেলে বাঙালি বনাম মুসলমান ছেলেদের মাঝে ফুটবল খেলা হবে,’ তবে তিনি বর্ষবরণের প্রচলিত আয়োজনকে বলতে পারেন বাঙালি সংস্কৃতি। কিন্তু কোনো মুসলমান কখনো বর্ষবরণের এ আয়োজনকে ‘আমাদের সংস্কৃতি’ বলতে পারেন না। আমরা ভাষায় বাঙালি, এ কথা সত্য; কিন্তু এর চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে—বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে আমরা মুসলমান।

মুসলমান হিসেবে আমাদের সবকিছুই অন্যদের থেকে আলাদা। জন্ম থেকে শুরু করে বিয়ে, অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সব কাজকর্ম, আচার-আচরণ ও রীতি-রেওয়াজ ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত। ধর্মভেদে সংস্কৃতি ভিন্ন হবেই। আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের বাইরে গিয়ে অন্য কিছুর চর্চা করবে, তা কখনো গ্রহণ করা হবে না’ (সুরা আল ইমরান: ৮৫)। তাই সব ধর্মের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য সর্বজনীন সংস্কৃতি বলতে উদ্ভট কোনো কিছুর অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে নেই।

নব্য সভ্যতার ফেরিওয়ালাদের বাক্যবুলি

হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির নামে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি চর্চার প্রতিবাদ করলে কিছু লোক চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। আঙুল তুলে বলে ওঠে, ‘ওরা সেকেলে, গোঁড়া, মৌলবাদী, ধর্মান্ধ।’ বাংলার মাটিতে যুগে যুগে গড়ে ওঠা আসল সংস্কৃতিকে বিদায় করে মাত্র কয়েক দশক আগে গজিয়ে ওঠা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকে বাংলার মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংস্কৃতিচর্চার নামে পৌত্তলিকতাকে গলাধঃকরণ করানো হচ্ছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার এই মোটিভ ইসলামের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সাংস্কৃতিক বা ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে এই চেতনা-বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মুসলমান এক আল্লাহতে বিশ্বাসী, ইসলামি আদর্শের অনুসারী। এর পরও কীভাবে ধুতি পরে, মাথায় সিঁদুর মেখে বাঙালিপনার চর্চা করি? হিন্দুরসে সিঞ্চিত এ বাঙালিত্বে লীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের মুসলমানিত্ব—এ কথা একবার ভেবে দেখেছি? সময়টা মুসলমানদের জন্য বড় দুর্দিনের। সঠিক আকিদা-বিশ্বাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, জীবন ও অস্তিত্ব—সবকিছুই এখন বিলীন হওয়ার পথে। দিন দিন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

আবহমানকাল ধরে একটি দেশের মানুষের রুচি, সামাজিক কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও বিশ্বাস নিয়ে গড়ে ওঠা রীতিনীতিই হলো দেশীয় ও লোকজ সংস্কৃতি। এতে মূলত ধর্মীয় বিধিনিষেধেরই প্রতিফলন ঘটে থাকে। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলামের অনুসারী হওয়ায় ইসলামই হচ্ছে এদের লোকজ সংস্কৃতির প্রাণশক্তি। এজন্য প্রকৃত দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই। কারণ তা মূলত ইসলামি সংস্কৃতি। যেমন আজান, নামাজ, ঈদ, কোরবানি প্রভৃতি।

কিন্তু ‘দেশজ সংস্কৃতির নামে যখন অন্য একটি পৌত্তলিক ধর্মের পূজা-পার্বণ এবং সংস্কৃতির অনুসরণ ও মিশ্রণের অপচেষ্টা করা হয়, তখন তা প্রতিহত করা অনিবার্য হয়ে যায়। অন্যথায় জাতীয় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। হাজার বছরের সংস্কৃতির সঙ্গে কিছু প্রাণিমূর্তির মঙ্গলযাত্রা যোগ করলেই তা দেশজ সংস্কৃতি হয়ে যায় না, বরং তা হচ্ছে মূলত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

সংস্কৃতি জাতির প্রাণশক্তি। ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে জাতীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়। কিন্তু বিশ্বায়নের নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার আমাদের সংস্কৃতি। অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক চাকচিক্যময় কুরুচিপূর্ণ আগ্রাসী অপসংস্কৃতি আমাদের যুব ও তরুণসমাজকে বিভ্রান্ত করছে। তারা নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে ভিনদেশি সংস্কৃতিতে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের অপসংস্কৃতি থেকে ফেরাতে না পারলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের জাতির নিজস্ব ইসলামি সংস্কৃতি কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। আর অপসংস্কৃতি প্রতিহত করতে হলে নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করতে হতে হবে। শেকড়সন্ধানী তরুণ-যুবক ও শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত করতে হবে। দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে আমাদের ইসলামি সংস্কৃতিকে। পরিহার করতে হবে পাশ্চাত্য ও হিন্দুয়ানি অপসংস্কৃতি।

 

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

aliosmansefaet@gmail.com

সোর্স : আমার দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *