কুতুবদিয়ার ঘাট পারাপারে সমস্যা বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

মতামত

 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সম্মানিত উপস্থিতি আসসালামু আলাইকুম
শুরুতে স্মরণ করতেছি জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া সকল বীরদের। সুস্থতা কামনা করতেছি আহত সকলের। আপনারা জানেন গত ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচার পতন হয়ে দেশ নতুন ভাবে পথচলা শুরু করেছে। কিন্তু সারাদেশে যখন মুক্তির উৎসবের আয়োজন চলমান তখন বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় ঘাট পারাপার নিয়ে চলছে বৈষম্য, হয়রানি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি।যেখানে একই সংসদীয় আসন মহেশখালীতে প্রতি কিলো স্পিড বোট ভাড়া ১০টাকা এবং প্রতি কিলো গাম বোট ভাড়া ৩.৩৩টাকা সেখানে কুতুবদিয়ায় প্রতি কিলো স্পিড বোট ভাড়া ৩১.৫৭ টাকা এবং গাম বোট ভাড়া প্রতি কিলো ৭.৯০ টাকা। তাছাড়াও গাম বোটে যাত্রীদের সাথে প্রচুর ব্যবসায়িক মালামাল, মাছের ড্রামসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহন করা হয় ইচ্ছে মতো।
এরই প্রেক্ষিতে কুতুবদিয়ার ছাত্ররা গত ১৫ ই আগস্ট ঘাট পারাপারে যাত্রীসহ পণ্যসামগ্রীর যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে ৬ দফা দাবি নিয়ে কুতুবদিয়ায় মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান করেন। নির্ধারিত সময়ের পর বর্ধিত সময়েও যৌক্তিক সমাধান না আসলে ছাত্ররা আবার ২৭ আগস্ট কুতুবদিয়া জেলা প্রশাসনের সামনে মানববন্ধনের ডাক দেয়। সেদিন উপজেলা পরিষদে ইউএনওর সাথে ছাত্রদের দীর্ঘ ৪ ঘন্টা আলাপ আলোচনা চলে। শেষে ইউএনও বলেন ঘাট বিষয়ে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ডিসি মহোদয়ের হাতে। সুতরাং তিনি কোনো সমাধান দিতে পারবেননা। কোনো সমাধান না পেয়ে ছাত্ররা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৪। ঐদিন জেলা প্রশাসকের অফিসে এডিসি(ভারপ্রাপ্ত), স্থানীয় সরকার ও বিভিন্ন পরিষদের অফিসারদের নিয়ে আবারো ৩ ঘন্টার একটা মিটিং হয়। সেখানে ছাত্ররা বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে এবং আইন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ইজারা বাতিলের দাবি করলে এডিসি মহোদয় নতুন ডিসি জয়েন করার আগ পর্যন্ত সময় চায় এবং অস্থায়ীভাবে ভাড়া কমিয়ে ১০ দিনের জন্য গাম বোট ৩০ এবং স্পিডবোট ৮০ টাকা রাখার প্রস্তাব দেয়। এছাড়াও ডিসি স্যার জয়েন করলে ৬ দফা যৌক্তিক দাবির স্থায়ী সমাধান দিবে বললে ছাত্র-জনতা সে রায়কে সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখে। কিন্তু ইজারাদার পরবর্তী ১০দিন স্থানীয় সকরার বিভাগ কতৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো ঘাট পরিচালনা করে যাত্রীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণে ডিসি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করার জন্য ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে একটা কমিটি গঠন করে এবং ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিনিধি টিম ঘাটে সরেজমিনে তদন্তকার্যে গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও হয়রানির চিত্র দেখতে পায়। তদন্ত কমিটির জেলা ও উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইজারাদারের কাছ থেকে বিগত ৩ মাসের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের হিসাব চাইলে ইজারাদার ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশকে কর্ণপাত না করে হিসাব দেখাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। তদন্ত কমিটি,ছাত্র প্রতিনিধি ও ইজারাদারের সম্মতিতে পরবর্তী ২দিন যাত্রী পারাপারে ঘাটে টিকিট এবং মালামাল পরিবহনে রশিদ সিস্টেম চালু করে তদন্ত কার্যে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও ইজারাদার কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে টিকিট সিস্টেম চালু করেননি। ১১তারিখের মধ্যে নতুন ডিসি জয়েন না করায় অস্থায়ী ভাড়ার সময়সীমা ৪দিন বর্ধিত করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কতৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও ইজারাদার গত ১২ তারিখ বিনা ঘোষণায় নৌ চলাচল বন্ধ রাখে ফলে রোগীসহ শত-শত যাত্রী উভয় পাশে আটকা পড়ে। এমতবস্থায় ছাত্র প্রতিনিধির পক্ষ থেকে কুতুবদিয়ার ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলেও তার কাছ থেকে সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা ও সদুত্তর না পাওয়ায় ছাত্র প্রতিনিধিরা পরে এডিসি মহোদয়, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ঘাট পারাপার স্বাভাবিক করার জন্য তারা সহযোগিতা করেন।

কুতুবদিয়া-মগনামা ঘাট পারাপারে ৬ দফা দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনের সাথে কয়েক দফা বৈঠক এবং সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে আমরা কিছু অসঙ্গতি দেখতে পায়। যা নিম্নরূপঃ
১. ডিডিএলজির বিপক্ষে অভিযোগঃ-
ক. তথ্য প্রদানে অস্বচ্ছতা,গাফেলতি।
খ. যথাসময়ে চুক্তি সম্পাদন না করা এবং চুক্তি ছাড়া ইজারাদারকে ঘাটের দখল বুঝিয়ে দেওয়া।
গ.প্রকাশ্যে দরপত্র ঘোষণা না করা

২. উপজেলা প্রশাসনের বিপক্ষে অভিযোগঃ-
ক. ছাত্র-জনতা ও সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা
খ. যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পেয়েও ইজারাদারের বিপক্ষে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া
গ. ইজারাদারের পক্ষ হয়ে সাফাই গাওয়া
ঘ. ঘাটে মালামাল পরিবহনের আয় বাদ দিয়ে তদন্ত কমিটির নিকট আয়-ব্যয়ের হিসেব তুলে ধরার চেষ্টা করা।

৩.ইজারাদারের বিপক্ষে অভিযোগঃ-
ক.ইজারার শর্ত ও প্রজ্ঞাপন না মানা।
খ. সাধারণ জনগনকে জিম্মি করে হয়রানি করা এবং প্রজ্ঞাপনের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করা
গ. প্রয়োজন অনুযায়ী যথাসময়ে নৌকা না ছাড়া।
ঘ. যাত্রীবাহী নৌকায় অধিক যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করা।
ঙ. যাত্রী হয়রানির উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিড বোট এবং গাম বোট সরবরাহ না করা।
চ. ফিটনেস বিহীন বোট ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিধানযোগ্য লাইফ জ্যাকেট না রাখা।
ছ. যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করা
জ. তাদের টাকায় ইজারা নেওয়া ঘাট যেমন ইচ্ছে তেমন চালাবে বলে যাত্রীদের হুমকি দেওয়া
ঝ. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাকে বিভিন্নভাবে মারধর ও প্রাণ-নাশের হুমকি দেওয়া
ঞ. যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা না টাঙ্গানো।
ট. পর্যটক এবং প্রবাসীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হয়রানি করা

অতএব, ছাত্র-জনতা বেআইনি ভাবে দখল করা ঘাটের ইজারা মেনে নিবেনা। তাছাড়া বৈষম্যহীন বাংলাদেশে কোনো প্রকার বৈষম্য বরদাস্ত করা হবেনা। সুতরাং ছাত্র-জনতা ইজারা বাতিল চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করলো।

পাশাপাশি ঘাট সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে-
১. দুদকের তদন্ত
২. আয়কর বিভাগের তদন্ত
৩. বিভাগীয় তদন্তের দাবি করতেছি।

ইজারা বাতিল চাওয়ার কিছু যৌক্তিক কারণ –
১.ইজারার ৪নং শর্ত অনুযায়ী চুক্তি না করে ঘাট দখল করা।
২. আইন অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভাড়া প্রকাশ না করা
৩.জনগণকে হয়রানি এবং সুযোগে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা।
৪.ইজারার ৭নং শর্ত অনুযায়ী ঘাট পরিচালনা না করা
৫. ইজারা হওয়ার সময় দূর্নীতির অভিযোগ
৬. কুতুবদিয়ার মানুষের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এবং অন্য সকল নৌপথের ইজারার তুলনায় অতিরিক্ত ইজারা মূল্য নির্ধারন করা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *