মাছ আহরণের ভরা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জলদস্যুরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বাত্মক অভিযানে শিথিলতা ও দেশের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন চ্যানেলে জলদস্যুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছে জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা।
দেশের ১৯ জেলা জুড়ে এক বিশাল এলাকা বঙ্গোপসাগরের উপকূল। এখানকার বাসিন্দাদের এক বিরাট জনগোষ্টি সাগর থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহের কাজে নিয়োজিত। জীবন জীবিকার তাগিদে জেলেরা নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে ও প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেই জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরতে নেমে পড়ে বঙ্গোপসাগরে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করে দেশে আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে এ-সব জেলেরা। এতে জেলেরা দেশে বড় ধরণের অর্থনৈতিক জোগান দিচ্ছে।
দেশে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিররতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অস্ত্রধারী জলদস্যুরা সাগরে মাছ ধরার ট্রলারের উপর হামলা চালিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। ইদানিং ট্রলারে মৃত্যু লাশ পাওয়ার খবরও শোনা যাচ্ছে।
ইলিশ প্রজনন হিসেবে গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত (২২ দিন) নদীতে ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকার পর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া কুতুবদিয়া উপজেলার ১নং উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ার মৃত জাফর আহমদ সিকদারের পুত্র মোকাররম (৪০) মাঝিকে গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ৩:০০ টার সময় জলদস্যুরা বেপরোয়া হামলা ও অতর্কিত গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
জেলেরা প্রতিটি ট্রলারসহ কোটি টাকার সমপরিমাণ পুঁজি দিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আহরিত মাছ যদি জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে লুট করে নিয়ে যায় তখন তাদের আর করার কিছুই থাকে না। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া একাধিক ফিশিং ট্রলারের মাঝির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যারা বিগত দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছে তারা আবার এসব জলদস্যুতার কাজে নেমে পড়েছে। তার সাথে ইদানিং কিছু যুবসমাজ তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে থানা ও মালিকানায় থাকা যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে এসব অস্ত্রগুলোও দস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
উপকূলের ফিশিং ট্রলার মালিকদের অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারছি, সাগরে জলদস্যু নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক এবং আত্মসমর্পণে প্রায়ই জলদস্যু জলদস্যুতা পেশা ছেড়ে সামাজিক সুশৃঙ্খল পেশা বেঁচে নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। ইদানিং দেখা যাচ্ছে দেশে বিরাজমান অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু সংখ্যক জলদস্যু তারা পূর্বের পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা ইলিশ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে আক্রমণ করে মাছ, জাল, ডিজেল, মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণহানিরও আশঙ্কা রয়েছে।
ইলিশের ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও অনেক জেলে জলদস্যুর আতঙ্কে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না। ফিশিং ট্রলার একবার সাগরে মাছ ধরতে যেতে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার (ডিজেল, খাবার, বরফ, বিভিন্ন সরঞ্জাম) প্রয়োজন হয়। একবার জলদস্যুদের কবলে পড়লে দ্বিতীয়বার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার অর্থ যোগাতে হিমসিম খেতে হয় ট্রলার মালিককে। জেলেদের দাবী সাগরে জলদস্যুতা নির্মূল করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের টহল আরো জোরদার করতে হবে।
এ দিকে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, পেকুয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফসহ উপকূলের জলদস্যুরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে একাধিক ট্রলার নিয়ে নির্বিচারে সাগরে জলদস্যুতার কাজে নেমে পড়েছে। এসব অপরাধ দমনে দেশে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর পাশাপাশি, সাগরে নৌবাহিনী কোস্ট গার্ডের টহল জোরদারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় বিভিন্ন পয়েন্টকে নজরদারির আওতায় আনা দরকার বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেন।
~আলী ওসমান শেফায়েত