কুতুবদিয়া প্রতিনিধি, ২০ এপ্রিল ২০২৫:
প্রকৃতির আপন খেয়ালে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের নেওয়া উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কায়সার পাড়া (সিকদার ঘোনা) এলাকায় সম্প্রতি এক উদ্বেগজনক চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বেড়িবাঁধের ভাঙন রোধে স্থাপন করা বালুভর্তি জিও ব্যাগগুলো কেটে ফেলছেন এবং ভেতরে থাকা বালি ফেলে দিয়ে খালি ব্যাগগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কায়সার পাড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০-২৫টি জিও ব্যাগ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয়রা সেই ব্যাগগুলো নিয়ে গিয়ে কেউ ঘরের চালে ব্যবহার করছেন, আবার কেউবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত কাজে লাগাচ্ছেন। এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানির প্রবল ঢেউয়ের মুখে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নোনা জল ঢুকে পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সংবাদকর্মী হোসাইন আলী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “কিছু অসাধু মানুষের লোভের কাছে আজ গোটা দ্বীপবাসীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন। বেড়িবাঁধ রক্ষায় তৈরি করা জিও ব্যাগ কেটে নেওয়ার এই ঘৃণ্য কাজের ফলে বর্ষায় আমাদের ফসলের জমি ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নাসির উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ব্যক্তিগত কাজে তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করছেন। তবে জিও ব্যাগ কাটার খবর জানার পর থেকেই তিনি চৌকিদার মারফত খোঁজখবর রাখছেন। মানুষের ঘরের চালে জিও ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, সেগুলো নতুন ব্যাগ লাগানোর সময় খুলে ফেলা পুরনো জিও ব্যাগ।
অন্যদিকে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “চৌকিদার দিয়ে নিয়মিত তদারকি করার পরেও রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা জিও ব্যাগ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী এল্টন চাকমা এই প্রসঙ্গে বলেন, “শুধু কায়সার পাড়া নয়, গোটা কুতুবদিয়ায় একই চিত্র। এ কারণেই এখানে কোনো উন্নয়ন কাজ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। স্থানীয়দের এই ধরনের কার্যকলাপ আমাদের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করে। আমরা বহুবার ছবিসহ থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। সরকারি সম্পদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। পুলিশ চাইলে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এদের হাতেনাতে ধরতে পারে। দু’ একজনকে আইনের আওতায় আনা গেলে বাকিরা সচেতন হবে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, দ্রুত এর লাগাম টানা না গেলে বর্ষা মৌসুমে কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এতে দ্বীপের মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন। প্রশাসন অতিসত্বর কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা।