মহেশখালী প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব রূপ পেল। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার অত্যাধুনিক সি-ট্রাক। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এই শুভ সংবাদ জানিয়েছে এবং আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে এই নৌপথে সি-ট্রাকটি চলাচল করবে বলে নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিকভাবে যাত্রী প্রতি ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার প্রান্তে সি-ট্রাকটির পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়। এ সময় স্থানীয় ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং অনেকে সি-ট্রাকের ছাদে উঠে আনন্দ প্রকাশ করেন।
সি-ট্রাক চালু হওয়ার প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলেন, “আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে এই নৌপথে স্থায়ীভাবে সি-ট্রাক চলাচল শুরু হবে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে এর শুভ উদ্বোধন করবেন। প্রথম পর্যায়ে একটি সি-ট্রাক চলাচল করবে এবং পরবর্তীতে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। আমরা যাত্রীদের সুবিধার্থে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা করছি, যা কোনোভাবেই ৪০ টাকার বেশি হবে না।”
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সি-ট্রাকের যাত্রী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)-এর যুগ্ম সদস্যসচিব এসএম সুজা উদ্দিন বলেন, “মহেশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হলো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল এই সি-ট্রাক সার্ভিস। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্পিডবোট সিন্ডিকেটের অবসান হবে এবং সাধারণ যাত্রীরা হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্রপথে ফেরি চলাচলের দাবি মহেশখালীর মানুষের দীর্ঘদিনের। অবশেষে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। চলতি বছরের ৫ আগস্টের পর স্থানীয় জনগণের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এই সি-ট্রাক (ফেরি) সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এর সাথে প্রয়োজনীয় পন্টুন স্থাপন করা হয়। এই সি-ট্রাকের মাধ্যমে কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালীতে একসাথে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবেন।
সি-ট্রাক চলাচল শুরুর খবরে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে আনন্দের ঢেউ লেগেছে। স্থানীয়রা জানান, এটি তাদের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই সি-ট্রাকের মাধ্যমে বিশেষ করে অসুস্থ, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য যাতায়াত অনেক সহজ হবে এবং দ্বীপের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
জেলায় বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন আরও জানান, মহেশখালীর জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে সি-ট্রাক চালু করেছে এবং খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে এর চলাচল শুরু হবে।
মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এই ঐতিহাসিক দিনে উপস্থিত থেকে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং জানান, প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী সি-ট্রাক মহেশখালী জেটি ঘাটে এসে ভিড়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে, যা যাত্রী ওঠানামায় সুবিধা দেবে।
শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার ও মহেশখালী জেটিঘাটে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলার মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার আজম প্রমুখ। সকলের মুখেই ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বপ্ন পূরণের আনন্দ।